করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষাজীবন, ব্যয় বেড়েছে ১৩ গুণ


কোভিড-১৯ এর প্রকোপে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের মানব সম্পদ সূচকে, এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর। এমনই হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ গভারন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর যৌথ গবেষণায়।
এক বছরব্যাপী ৬ হাজার ৯৯ শিক্ষার্থী পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে।
এই দুই সংস্থা জানাচ্ছে, করোনা শুরু হওয়ার পর মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছেন। যারা অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের বসবাস শহরাঞ্চলে। মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে এ সুবিধা থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন প্রান্তিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ গবেষণা থেকে জানা যায়, করোনা শুরুর আগেই প্রাথমিক পর্যায় থেকে ১৪ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এ অবস্থায় করোনার পরে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
এ সময়কালেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, যার মোট হার ৪ শতাংশ।
এ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিত্র। দেখা গেছে, ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক পীড়ায় ভুগছেন।
শহুরে বস্তিতে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ৬২ শতাংশের ভেতর মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ বেশি। তাদের মধ্যে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, বাইরে বের হতে ভয় পাওয়া এবং হিংস্র আচরণ বেড়েছে আশংকাজনক হারে, যা সহিংসতা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণাটিতে আরও দেখা গেছে করোনার এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ বেড়েছে ১৩ গুণ। এ খরচের হার শহরে তুলনামূলকভাবে বেশি।
বর্তমানে ৮ শতাংশ স্কুলগামী ছেলে এবং ৩ শতাংশ মেয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এমন অবস্থায় বাবা-মায়েদের মূল শংকা করোনা নিয়ে নয়, বরং তাদের চিন্তা স্কুল খোলার অনিশ্চয়তা এবং বাচ্চাদের পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে।