মহাতীর্থ অষ্টমী স্নানের তাৎপর্য।


প্রদীপ আচার্যঃ
শ্রী কাশিরাম দাসের মহাভারতের কাহিনী অনুসারে,,
জমদগ্নি মহামুনির রেনুকা নামে এক রাজ বংশীয় পরমা সুন্দরী স্ত্রী ছিল। তাদের ছিল পাঁচ পুত্র। সর্ব কনিষ্ঠের নাম ছিল পরশু রাম। ঘটনাক্রমে মার্তিকাবর্ত দেশের রাজাকে সস্ত্রীক জল বিহার করতে দেখে আশ্রম বাসিনী রেণুকা কাম স্পৃহ হয়ে পড়েন এবং নিজের পূর্ব-রাজকীয় জীবন সম্পর্কে স্মৃতিভ্রষ্ট হন। মুনি ধ্যানবলে স্ত্রীর এই আসক্তি দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে পাঁচ পুত্রকে তাদের মাতাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন।
কিন্তু কোনো পুত্রই মাতৃ হত্যার মতো এতোবড় পাপকার্য করতে রাজি হচ্ছিলোনা। শেষপর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ পুত্র পরশু রামকে জমদগ্নি ঋষি বাধ্য করতে পেরেছিলেন হুকুম পালনে। তিনি পরশু রামকে বললেন, তুমি তোমার মা ও চার ভাইকে এক্ষুনি হত্যা করো ও পিতৃ আজ্ঞা পালন করো। পরশুরাম তাৎক্ষণিক পিতৃ বাক্য পালন করতে, তার হাতের কুঠার দিয়ে মা ও চার ভাইয়ের শিরচ্ছেদ করে ফেললেন।
মা ও ভাইদের হত্যার পর পরশুরাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরলেন। অপরদিকে মহামুনি জমদগ্নি প্রশান্ত চিত্তে, পরশুরামের এহেন কঠিন কার্য সমাধান করায় বর দিতে উদ্যত হলেন। বললেন, পরশুরাম কি বর চাও? পরশুরামও তাৎক্ষণিক ঋষি জমদগ্নির কাছে তার মা ও চার ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার বর প্রার্থনা করলেন। ঋষি তথাস্তু বলার সঙ্গে সঙ্গে মা ও চার ভাই নতুন জীবন ফিরে পেলো।
ঘটলো বিপত্তি!
পরশুরামের হাত থেকে যে কুঠার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিলো, সেই কুঠারটি হাত থেকে কোনভাবেই সরছিলোনা। তখন পরশুরাম আবারও মহামুনি জমদগ্নির কৃপা প্রার্থনা করলেন। জমদগ্নি তখন বললেন, মাতৃহত্যা ও নারীহত্যা এই দ্বিপক্ষীয় পাপ মোচন করতে তুমি সমগ্র পীঠস্থান ঘুরে কোশলের বিষ্ণুদশা দ্বিজের কাছে যাও। তিনি তোমাকে পাপমোচনের পথ বলে দিবেন।
পরশুরাম তাই করলেন। বিষ্ণুদশা সব শুনে পরশুরামকে বললেন, হিমালয়ের মানসসরোবরে দেবতা ব্রহ্মপুত্র হ্রদ রুপে লুকিয়ে আছেন। সেই হ্রদে স্নান করেই তুমি মুক্তি পেতে পারো এই মহাপাপ থেকে।
পরশুরাম, বিষ্ণুদশার কাছে ব্রহ্মপুত্রের মাহাত্ম্যের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক মানসসরোবরে উপস্থিত হয় ও সেখানে দেবতা ব্রহ্মপুত্রকে হ্রদ আকারে দেখতে পেয়ে সে সেই হ্রদে কুঠার বেষ্টিত হাত নিয়ে ঝাঁপ দেয়। আর ঝাঁপ দেয়ার সাথে সাথে পরশুরামের হাত থেকে কুঠারটি খসে পরে এবং পরশুরাম মহাপাপ থেকে মুক্ত হন।
আর এই পাপমুক্ত হবার দিনটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথি।
পরশুরাম, ব্রহ্মপুত্র হ্রদের এমন অলৌকিক শক্তিতে অভিভূত হয়ে গেলেন এবং এই জলধারা সমতলে প্রবাহিত করার জন্য দেবতা ব্রহ্মপুত্রের কাছে প্রার্থনা রাখলেন। দেবতা ব্রহ্মপুত্র পরশুরামের আকুতিতে সন্তুষ্ট হয়ে সমতলে প্রবাহিত হতে রাজি হলেন।
পরশুরামের হাতের কুঠারটিকে লাঙ্গলের আকারে বেঁধে মাটি খনন করতে করতে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের চিলমাড়ি নামক স্থানে এসে প্রথমে বিশ্রাম নেন।
এরপর নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এসে মাটি খননের লাঙ্গল টানা বন্ধ করেন। যে জায়গায়টায় পরশুরামের লাঙ্গল টানা বন্ধ করলেন। পরবর্তীতে সেই জায়গাটার নামকরণ হয় লাঙ্গল বন্ধ।
আর সেই থেকে কুড়িগ্রামের চিলমাড়ি ও নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ ব্রহ্মপুত্র নদের জলে প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথিতে, পাপমোচনের বাসনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।
যা মহাতীর্থ অষ্টমী স্নান উৎসব নামে অভিহিত।