সমাজ শাহী মসজিদ


প্রণয়ের নদী করতোয়া। ইতিহাস, ঐতিহ্যমিশ্রিত স্রোতধারা। এ ধারায় প্রবাহিত হয় কত মুমিনের ওজুর পানি। প্রভু প্রেমের কান্নার নোনাজল। করতোয়ার পাড় ঘেঁষে অবস্থিত প্রাণের নগরী পাবনা।
পাবনার চাটমোহর ইতিহাসের ছোঁয়ায় সুরভিত। সুরভিত আলোয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘সমাজশাহী মসজিদ।’ ৪৬৫ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখা স্থাপত্য। শেরশাহের আমলে নির্মিত এটি। নির্মাণ বিন্যাস কাছে টানার মতো।
দৈর্ঘ্যে ৫১ ফুট। প্রস্থে সাড়ে ২২ ফুট। শেওলা পড়া ছাদ। ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ। ছোট গম্বুজ চারটি। স্থাপত্যশৈলীর প্রণয়মিশ্রিত কারুকার্য। বারান্দায় দুটি লম্বা স্তম্ভ। কষ্টিপাথরের মজবুত স্তম্ভ। প্রশস্ত দেওয়ালে ঘেরা জাফরি ইটের বন্ধন। গায়ে টেরাকাটা নকশা। নকশার অসংখ্য ফলক। অমলিন মেঝ।
পশ্চিমে শানদার মেহরাব। পূর্বে তিনটি মূল দরজা। কয়েকটি জানালা। বাইরে দুটি কালো পাথর। পাথরে খোদাই করা আয়াত। পবিত্র কুরআনের অনন্য ব্যঞ্জনা। এদের সঙ্গী ছিল আরও দুটি পাথর। পরিস্থিতির বিবেচনায় যা এখন ভারতের জাদুঘরে। বাইরে ছায়াময় গাছ। ঝরা শুকনা পাতা। গাঢ় লালচে বিবর্ণ পাতার গালিচা।
গালিচার নিচে ঢাকা পড়া পুরনো এক কবর। কবরে শুয়ে আছেন মুসলিম সাধক আশরাফ জিন্দানি (রহ.)। পাশ ঘেঁষে উন্মুক্ত বিশাল দিঘি। ২২ বিঘার প্রশস্ত শরীর। জলে সবুজের আবরণ। ভালোবাসার ছোঁয়া।
প্রাণের ধর্ম ইসলামকে ছড়িয়ে দিতে বাংলার গৌড়ে আসেন ১২ আউলিয়া। তাদের অন্যতম শায়েখ আশরাফ জিন্দানি (রহ.)। তার অনুরোধে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দে অসাধারণ এ স্থাপনা নির্মাণ করেন শাহজাদা সেলিম। নির্মিত হয় ৫০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করা এ মসজিদটি। অজানা এক কারণে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। দূরে ছিল নামাজির ছোঁয়া থেকে। মুমিনের প্রেম থেকে। মুসলমানের অবিরাম ভালোবাসা থেকে। কুরআনের মধুময় আওয়াজ থেকে। হাদিসের অনন্য আলো থেকে।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ। কিছু সচেতন মুসলামান এগিয়ে আসেন। হাত দেন স্থাপত্যটি পুনঃনির্মাণের। তৎকালীন ভারত সরকার উদ্যোগটি স্বাগত জানায়। রাষ্ট্রীয় খরচে পুনর্নির্মাণ করে মসজিদটি। এ পুনর্নির্মাণের সময় অনেক কিছুই হারিয়ে যায় এখান থেকে। কিছু ঐতিহাসিক স্মৃতির পাতা স্থান পায় ভারতের জাদুঘরে। বিলুপ্ত হয় ইতিহাসের অনেক আঁচড়ের দাগ।
মসজিদটি এখন অনেক সমৃদ্ধ। অসাধারণ ব্যবস্থাপনা। পাশে কুরআনি ধ্বনিতে আলোড়িত হিফজুল কুরআন বিভাগ। বাতাসে ভাসে কালামুল্লাহর ঘ্রাণ। আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধুর উচ্চারণ।
এভাবে সজিব হোক সেজদার ঐতিহাসিক প্রতিটি ভূমি। পরিত্যক্ত আল্লাহর ঘর। মিনারে বেজে উঠুক প্রভুর জয়গান। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ুক সত্যের সুবাস। প্রাণ ফিরে পাক ইমানের অনন্য অধ্যায়।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক