জাতীয়

৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ শাহবাগ, বিরক্ত সাধারণ মানুষ বলছেন ‘সরকার কেন নির্বিকার?

নার্সিং ডিপ্লোমাকে ডিগ্রির সমমান দেওয়ার দাবিতে আজ (বুধবার) দুপুর থেকে রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক.

নার্সিং ডিপ্লোমাকে ডিগ্রির সমমান দেওয়ার দাবিতে আজ (বুধবার) দুপুর থেকে রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়কে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। টানা ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা অবরোধে বিরক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান বহু সাধারণ মানুষ। বাধা উপেক্ষা করেই অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হয়ে যান শাহবাগ মোড়। তারা শিক্ষার্থীদের ভর্ৎসনা করেন। গালমন্দ খেয়ে কিছুটা অসহায়ত্ব দেখা যায় আন্দোলনকারীদের মধ্যেও!

বুধবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।এই আন্দোলনের ফলে শাহবাগ থেকে নীলক্ষেত, বাংলামোটর, সায়েন্সল্যাব, রমনা ও কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে স্কুলবাস, অফিসগামী গাড়ি সবই আটকে থাকে দীর্ঘসময়।

টানা অপেক্ষায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন, কেউ আবার ব্যারিকেড সরিয়ে নিজেই পথ বের করার চেষ্টা করেন।

মগবাজার থেকে অফিসফেরত সরকারি কর্মচারী হাফিজুর রহমান বলেন, শাহবাগ মোড়ে আন্দোলন করা যেন প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। মানুষের দাবি থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে কি এই যে, হাজার হাজার মানুষকে জিম্মি করে রাখতে হবে? সরকারও নির্বিকার, এটা খুব হতাশাজনক।

সন্ধ্যার পর প্রায় ১০-১৫ জন বাইকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। তারা বলেন, রাস্তায় বসে থাকলে সমাধান আসবে না। জনগণকে জিম্মি করে আন্দোলন কখনো সফল হয় না। পরে বাধা উপেক্ষা করে তারা মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যান।

সারাদিনের আন্দোলনে ক্লান্তি ও উদ্বেগের ছাপ দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের মধ্যেও। বৃষ্টি, গরম ও ক্ষুধায় অনেকেই শ্রান্ত হয়ে পড়েন। কেউ রাস্তার পাশে বসে আছেন, কেউ স্লোগানের শক্তি হারিয়ে নীরব হয়ে গেছেন।

শিক্ষার্থী আরিফ আহমেদ বলেন, দুপুর থেকে কিছুই খাইনি। শাহবাগে বসে থাকতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে। জানি মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমরাও চাই না এমনটা হোক। কিন্তু আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের আর পিছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে দুপুর আড়াইটার পর একদফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

আন্দোলনকারীরা জানান, এইচএসসি পাসের পর তিন বছর মেয়াদি ১১০ ক্রেডিটের ‘ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি’ ও ‘ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি’ কোর্স সম্পন্ন করার পরও তাদের ডিগ্রির সমমান দেওয়া হচ্ছে না। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি পরবর্তী তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রির স্বীকৃতি পান। এতে ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, অবিলম্বে ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সগুলোকে স্নাতক সমমান বা ডিগ্রি পাস কোর্স হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাফিয়া চৌধুরী বলেন, এক দফা দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। কিন্তু সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এর আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকেই তারা শাহবাগ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। জানা গেছে, শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন।

Back to top button