কাউখালী থানার উপ পরিদর্শক মানবিক পুলিশ ফরহাদের বদলি।

মোঃ বাবুল,নিজস্ব প্রডিবেদকঃ সদ্য বদলি হওয়া কাউখালী থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ফরহাদুর রহমান। দীর্ঘ ২৬ মাস কর্মময় সময় পার করে চাকুরীজীবিদের চিরচারিত নিয়মে বদলি হয়েছে কুমিল্লায়। এর ফলে কাউখালীবাসী হারালো এক মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা। মানুষ বাঁচে তার কর্মে ফলে বয়সে নয়। ঠিক এই কথাটি যেনো এই পুলিশ কর্মকর্তার জন্য প্রযোজ্য। এই দীর্ঘ কর্মময় সময়ে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন উদ্ধার করে হাঁসি ফুটিয়েছেন শতাধিক মানুষের মুখে। এছাড়া বিভিন্ন মামলা তদন্ত করে প্রকৃত সত্য তুলে এনে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন তিনি। কাউখালী উপজেলার হারানো ও চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে অনন্য এক রেকর্ড করেছেন। যা পূর্বের কোন কর্মকর্তাই এত সংখ্যক মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি।
সাধারণ মানুষের মন জয় তো করেছেনই। দায়িত্বশীলতা ও সততার পরিচয় দিয়ে মন জয় করেছেন উর্ধতন কর্মকর্তাও। তাইতো এই প্রতিবেদকের সাথে কোন এক গল্পের মাঝে কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ পারভেজ আলী, বিদায়ী মানবিক পুলিশ কর্মকর্তাকে সততার ও দায়িত্বশীলতার কারণে এযুগের মহা মানব বলে মন্তব্য করে বসেন।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার রসুল্লাবাদ গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ফরহাদুর রহমান। ২০০৬ সালে কনস্টেবল পদে যোগদান করে ২০১৬ সালে উপ পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২৬ মাস কাউখালীর এই কর্মময় সময়ের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম বিদায়ী এই পুলিশ কর্তকর্তার কাছে।
কেমন কাটিয়েছেন কাউখালীর ২৬ মাস ?
নির্ভেজার একটি সুন্দর সময় কাটিয়েছি। এই কাউখালীর কর্মময় সময়ের সব চেয়ে সুখের স্মৃতি হালো পুত্র সন্তানের জন্মের ৮ বছর পর কন্যা সন্তান পাওয়া। সকল সহকর্মী ও কাউখালীর মানুষের অন্য রকম ভালোবাসা পেয়ে বেশ ভালো কেটেছে এই পুরো সময়টা।
দায়িত্বের বাইরে আপনি কেনো বাড়তি কাজ করেন ?
বিভিন্ন সময় নিজের জিনিস হারিয়ে আবার ফিড়ে পাওয়ার আনন্দ কি তা আমি অনুভব করতাম। যখন দেখলাম অন্যের হারিয়ে যাওয়া জিনিস পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ আমার কাছে আছে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে হারানো বা চুরি হওয়া জিনিস ফিরিয়ে দিতেই বাড়তি দায়িত্ব পালন করা।
এ যাবত কতগুলো মোবাইল উদ্ধার করেছেন?
কাউখালীল প্রথম ১৩/১৪ মাস মোবাইল হারানোর জিডি আমার নামে দেওয়া হয়নাই। পরে যখন একটা দিয়েছে ওটা উদ্ধারের পর নিয়মিত চেষ্টা করে গেছি। লাস্ট ১০ মাসে ১০০ এর অধিক মোবাইল উদ্ধার করে দিয়েছি।
এসবের মধ্য কোন বিষয়টি আপনাকে বেশি আনন্দিত করেছে?
সব গুলোই আনন্দ দেয়। এর মধ্য একজন উপজাতী অটোরিক্সা ড্রাইভারের মোবাইল উদ্ধারের পর তার পুরো পরিবার (বৃদ্ধ মাকে সহ) নিয়ে আসছিলো মোবাইল টা নিতে। অটো চালকের ধারণা ছিলোনা মোবাইল হারালে আবার পাওয়া যায়। মোবাইল পাওয়ার পর তার পুরো পরিবারের অশ্রুশিক্ত চোখ আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। রাস্তায় প্রায় লোকেই দেখেলে বলতো মোবাইল হারাইলে টেনশন নাই, ফরহাদ ভাই আছেতো।
কোন বিষয়টি কষ্ট দিয়েছে?
একটি সংস্থায় কর্মরত এক ব্যক্তির ২টি ফোন চুরি হয়েছিলো। মোবাইল দুটি উদ্ধারের পর জানতে পারি তার সহকর্মী ফোনটি চুরি করে। পরে দাপ্তরিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে এমন ভয়ে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার চাকরি ছেড়ে পারিয়ে যাওয়াটা আমাকে ব্যথিত করেছে।
এই সততা কার থেকে অনুপ্রাণিত?
সততা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমি ঘুষ খাবো এটা আমার ফ্যামেলি চিন্তাও করতে পারেন। মূল অনুপ্রেরণা আমার পিতা।
কি হলে আরও দ্রুত মানুষের ফোন উদ্ধারে সহজ হতো?
আমাদের একটা অফিসিয়ালি সিডিআর পেতেই মাসের উপরে লেগে যায়। তথ্য প্রযুক্তির যে সাপোর্ট সেটা যদি সহজলভ্য হয়। উপজেলা না হোক অন্তত জেলা পর্যায়েও এই সাপোর্ট টা পাওয়া যায় তবে শুধু মোবাইল ফোন উদ্ধার নয়। যে কোন অপরাধ সহজে সনাক্ত করা যাবে। অপরাধ দমনেও পুলিশ ভালো ভুমিকা রাখতে পারবে।
কাউখালীকে মিস করবেন কি?
কাউখালীকে অনেক মিস করবো। কাউখালীর মাটিটাও আমার কাছে আপন মনে হয়। পরিবার নিয়ে থাকায় সবার সাথে একটা সুহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।
কাউখালীবাসীর কাছে আপনার চাওয়া?
দায়িত্বে খাতিরে ওয়ারেন্টের অনেক আসামি ধরতে হয়েছে। হয়তো ঔই আসামির মা, স্ত্রী, সন্তান অসুস্থ, ঔষদ নিতে আসেছে বা বিভিন্ন সমস্যায় ছিলো, দায়িত্বের খাতিরে গ্রেফতার করতে হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই এরকম অনেকের মনে কষ্ট দিয়ে থাকতে পারি। তারা যেনো আমাকে ক্ষমা করে দেয়। কাউখালীবাসির জন্য আমি দোয়া করবো। কাউখালীবাসী কাছেও দোয়া চাইলেন এই কর্মকর্তা।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ পারভেজ আলী এই কর্মকর্তা সম্পর্কে বলেন- সে এত বেশি ভালো এবং এত সততার সাথে চাকরি করছে। সাধারণত এ ধরনের অফিসার পাওয়াটা বিরল। সে সত্যিকার অর্থে একজন মানবিক পুলিশ। মানবিক পুলিশ হওয়ার জন্য আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে চেষ্টা করছে তার প্রতিফলন হলো ফরহাদ। বদলীর চাকরি বলে তাকে চলে যেতে হচ্ছে। আমরা সবাই তাকে খুব ফিল করতেছি। একজন এএসআই হয়েও এত বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে যা সত্যিই প্রসংশার দাবি রাখে। ক্যাপাবল একজন অফিসার। কাউখালীর অনেক মোবাইল সে নিঃস্বার্থ ভাবে উদ্ধার করে দিয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে গর্ভবোধ করি। সে যেখানেই যাবে আল্লাহর রহমতে ভালো করবে।